ভালোবাসার আসল সত্য



 ওর নাম মিতু, বয়স বছর উনিশ হবে , সোমখালি গ্রামের সবথেকে শান্ত মেয়ে।পড়াশোনার ব্যপারটা একটু পরে বলি। বাবা মানুষের বাড়িতে রাজমিস্ত্রী কাজ করে কোন মতে তাদের দিন কেটে যায়। বাড়িতে বাবা আর ও । ওর মা দু বছর আগে মারা গেছে তারপর  ও নিজের থেকে পড়াশোনা বাদ দেয়। কারন ওর বাবা বাইরে বাইরে থাকে তাই তাকে ঘরের দিকে লক্ষ রাখতে হয়। অবশ্য এ ছাড়াও অন্য একটি কারন ছিল, যা মিতু ছাড়া আর কেউ জানতো না, হয়তো কেউ বুঝতে চেষ্টাই করেনি । 

ইন্টার পরিক্ষার সময়  মিতুর পাশে সিট পড়েছিল ওর। নাম দী্‌প, পড়াশোনায় বেশ ভালো। দীপ হাসি খুশী ও দেখতে খুবই ভালো ছিল। দুটো পরিক্ষা হতে না হতেই  দুজনের মধ্যে খুব মিল হয়ে যায় । তবে মিতুর একটু অন্য রকম মিল হয়ে যায়, অর্থাৎ মিতু ওকে খুব ভালোবাসতে শুরু করে। কিন্তু দীপ তেমন কিছু বলেনা বলে তার ভালোবাসার কথা জানাতে পারতো না। পরিক্ষা দিন দিন শেষ হয়ে আসছে, কিন্তু মিতু বলবো বলবো করেও বলতে পারছে না। মিতু দিন রাত ওকে নিয়ে সপ্ন দেখে। মিতু চোখ বুঝলেই দেখতে পায়, দীপের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে ও, দীপ ওকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, হঠাৎ একটি শব্দে ওর সপ্ন ভেঙ্গে যায়।  মিতু দিন দিন অস্থির হয়ে উঠতে লাগলো। কেননা পরিক্ষা শেষ হতে আর দুদিন বাকি আছে। অবশেষে পরিক্ষার হলের শেষ বিদায় ঘন্টা বেজে উঠলো। মিতু নিজেেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। সে ছুটে পরিক্ষার হলের বাইরে চলে গেল কারন সে দীপকে বিদায় জানাতে পারবে না। 

এরপর থেকে দীপ ছাড়া আর কারো কথা ভাবতে পারতো না মিতু,  এরপর  থেকে দীপেরসাথে কখনো দেখা হয়নি তার।এভাবে দুটো বছর পার করে ফেলেছে সে। মিতু দিন  দিন  কেমন হয়ে যেতে থাকলো। মিতুর বাবা দিনদিন মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ একদিন পাশের বাড়ির এক ভদ্রলোক বললো, তার বোনের ছেলের বিয়ে দেবে তাই মিতুকে তার বৌমা করে নিতে চায়। ছেলে ভালো চাকরি পেয়েছে, ভালো বেতন পায়। দুই তিন দিনপর মিতুকে ছেলেও তা পরিবার দেখতে আসে। মিতু সরাসরি ওর বাবাকে না করে দেয়। তবু বাবার অনুরোধে মেয়ে  তাদের সামনে যায় কিন্তু সে ছেলের না দেখেই  চলে আসে। পরের দিন ছেলের বাড়ি থেকে জানায় যে মেয়েকে তাদের খুব পছন্দ হয়ছে এবং বিয়ের তারিখ ও জানিয়ে দেয়। মিতুর দীপের কথা খুব মনে পড়তে থাকে পরিক্ষার সময়গুলো ।

হঠাৎ তার পরের দিন বিকালে রাস্থায় দীপের সাথে দেখা হয়ে যায় মিতুর।অনেক বড় হয়েছে দীপ। মিতু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। মিতু আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না, দৌড়ে দীপকে বুকে নিয়ে বললো 

"দীপ আর কত, আর কতো কাদাবে আমায়"

দীপ বললো আমি কখন তোমায় কাদালাম। পরিক্ষার শেষ দিন তোমাকে মনের কথা বলবো বলে এসেছিলাম আমি। কিন্তু তুমি, তুমি চলে গেলে। এই কথাশুনে মিতু জোরে কাদতে কাদতে বললো তোমায় বিদায় জানাতে পারবো না বলে চলে গিয়েছিলাম আমি। এরপর দীপ অস্ত্রু মুসতে মুসতে বললো অনেক খুযেছি তোমায় আমি। মিতু বললো আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ছেলে ভালো চাকরি করে, ভালো বেতন পায়। আর তোমাকে এই বিয়ে আটকাতে হবে, অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না আমি। তবে বিয়ে আটকানোর ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ দেখালো না দীপ।বিয়ের দিন চলে এলো। মিতু উতলা হয়ে উঠেছে, এছাড়া দীপের কোন খবর নেই, দীপের দেওয়া নম্বরেও ফোন ঢুকছে না মিতুর। অবশেষে মিতু বিয়ের আসরে উপস্থিত হলো, এবং মিতু অবাক হয়ে পাত্রের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কারন পাত্র আর কেউ নয় দীপ বসে আছে


কারন যে ছেলে তাকে দেখতে এসেছিল সে দীপ ছিলো। আর মিতু তাকে ভালোবাসে কিনা জানার জন্য রাস্তায় দেখা করেছিল।


  • কিছু কথা ঃভালোবাসার মানুষের কাছথেকে নিজের মনের কথা গোপনে বেশীক্ষন চেপে রেখো না। কিছুটা হলেও প্রকাশ করো।

Comments